চট্রগ্রামে ইসকন নিয়ে উত্তেজনা, যৌথবাহিনীর ১৩ সদস্য আহত


সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাজারি গলি এলাকায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে।

ইসকন নিষিদ্ধের দাবী সংবলিত এই পোস্ট'কে কুরুচিপূর্ণ দাবী করে ইসকন সমর্থকসহ কয়েক হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উক্ত পোস্টকারীর দোকানে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এসময় তারা পোস্ট শেয়ার করা ব্যবসায়ীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

খবর পেয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত যুবককে উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নিয়ে থানায় ফেরার পথে পার্শ্ববর্তী ভবনের ছাদ থেকে এসিড ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এসময় কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ যৌথবাহিনীর মোট ১৩ জন সদস্য আহত হয়। যৌথ বাহিনীর টাস্কফোর্স-৪ চট্টগ্রাম থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে যৌথ বাহিনীর উপর হামলা'র ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। যাছাই বাছাই শেষে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা। এছাড়া পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে জানিয়ে সকলকে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বলেও যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে ঘটনার কারণ হিসেবে জানা যায়, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করেন। ফটোকার্ড সম্বলিত সেই পোস্ট কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ঘুরছিল। একদিন আগে এটি নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন হাজারি গলির মিয়া শপিং সেন্টারের একটি দোকানের মালিক।ওই ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ইসকন সদস্য এবং সমর্থকসহ বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী পোস্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ইসকন সমর্থকসহ ৫ থেকে ৭ হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী উক্ত মার্কেটে চড়াও হন। তারা বিভিন্ন ধরণের স্লোগান দিয়ে দোকানটিতে হামলা ও ভাংচুর চালান।

তারা ওই দোকানের মালিক ফেসবুকে পোস্টকারী যুবকের উপর হামলা ও মারধরের চেষ্টা করেন। তারা উক্ত যুবককে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন এমন খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কেটের গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উক্ত যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উত্তেজিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ। তবে শান্ত হওয়ার পরিবর্তে পুলিশের উপর এসিড ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে একটি মহল।এসময় আহত হন বেশ কিছু গণমাধ্যমের কর্মীরাও।খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী'র সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে, উত্তেজনাপূর্ণ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আবারো হামলা করা হয়।এসময় যৌথবাহিনী লাঠিচার্জ করলে হামলাকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।এঘটনায় যৌথ বাহিনী'র বেশ কিছু সদস্যও আহত হয়।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, 'আমরা ওই যুবককে নিয়ে চলে আসার সময় পেছন থেকে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে পুলিশসহ যৌথবাহিনী'র কিছু সদস্য আহত হয়েছে।'

আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে যৌথবাহিনী বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ‍্য পেয়েছে জানিয়েছে একটি সূত্র । তারা বলছে এটি কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের কাজ নয়। বড় একটি লক্ষ্য নিয়ে একটি চক্র কাজ করছে বলে যৌথবাহিনী'র সূত্রটি জানিয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। এ বিষয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, ‘ইসকন নিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্টের প্রেক্ষিতে এক ব্যবসায়ীকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে।’

পুলিশের উপর এসিড নিক্ষেপসহ হামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, ইসকন সমর্থকেরা পুলিশসহ যৌথবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছেন। রাতে পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী, পুরো এলাকা যৌথবাহিনী ঘিরে রেখেছে। এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

নবীনতর পূর্বতন