আরিফুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচয় দেন মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে। মুমূর্ষু মানুষের রক্ত সহায়তার জন্য গড়ে উঠা ‘খাগরিয়া ব্লাড ব্যাংক’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এডমিন তিনি। রক্তদানের ছবি প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়।
এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এটাই আরিফের আসল চেহারা নয়। মানবিকতার আড়ালে তিনি যা করেছেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো। প্রকৃতপক্ষে সে একজন ভয়ংকর অপরাধী ও স্বৈরাচারের দোসর। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, আরিফের বিরুদ্ধে রয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ।আরিফুল ইসলামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নে। সে ওই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবিতে দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট দুপুর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন কৃষক-শ্রমিক, জনতাসহ সকল শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ। ওইদিন বেলা ৩টায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলার মিঠাদিঘী থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। এছাড়া খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে। মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা কেরানীহাট স্টেশনের দিকে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে কেরানীহাট স্টেশনে পৌঁছালে বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ।জানা গেছে, ওইদিন সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হন কেরানীহাটে। ছাত্র-জনতাকে দমনে সেখানে দফায় দফায় বৈঠক করেন তারা। সিদ্ধান্ত নেন ছাত্র-জনতাকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার। নিজের ইউনিয়ন থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন ছিলেন খাগরিয়া ব্লাড ব্যাংকের এডমিন ও ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্র বলছে, সেই দিনের অস্ত্রধারীদের অনুসারী কেউ কেউ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘটনার দিন অস্ত্র বহন এবং গুলি বর্ষণের ঘটনায় কেউ মুখ খুললে তাদের দেখে নেয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এমনকি মানবিক কার্যক্রমের আড়ালে এখনো এলাকায় সক্রিয় ছাত্রলীগ ক্যাডার আরিফ। কিন্তু ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে বহাল তবিয়তে খাগরিয়া ব্লাড ব্যাংকের এডমনি পদে। রীতিমতো প্রকাশ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে স্বৈরাচারের এ দোসর।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে খাগরিয়া ব্লাড ব্যাংকের পরিচালক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, শিগগিরই মিটিং করে এডমিন আরিফুল ইসলামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় হবে।
তবে এ ব্যাপারে খাগরিয়া ব্লাড ব্যাংকের এডমিন ও ছাত্রলীগ ক্যাডার আরিফুল ইসলামের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।এদিকে, কোটাআন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগ এই যৌক্তিক আন্দোলনে (কোটা আন্দোলন) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ না করে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো। তারা আধুনিক ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের বোনদেরকে রক্তাক্ত করেছে, ভাইদেরকে গুলি করে শহীদ করেছে। এটি কোনো ছাত্র সংগঠন না, ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা মানবতার আড়ালে সক্রিয় থেকে আধিপত্য বিস্তার করে যাবে সেটা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। অবিলম্বে খাগরিয়া ব্লাড ব্যাংকের এডমিন পদ থেকে ছাত্রলীগ ক্যাডার আরিফকে বহিষ্কারের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।